নৌকার ভরাডুবি

জনবিচ্ছিন্ন মাঝির কারণে কুষ্টিয়ায় নৌকার ভরাডুবি

কুষ্টিয়ায় নৌকার ভরাডুবি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়ার চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে তিনটিতে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। একটি আসনে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়ার চারটি আসনেই বর্তমান এমপিরা পুনরায় নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দীতার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু পূর্বে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকায় না থাকা, জনগনের সাথে সম্পর্ক না রাখা এবং সংগঠনের তৃণমূলের কর্মীদের সাথে দূরুত্ব তৈরী হওয়ার কারণে তিনটি আসনে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

কুষ্টিয়া -১ (দৌলতপুর) আসনে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ. কা. ম সরওয়ার জাহান বাদশা। নির্বাচিত হওয়ার পর হতে সংগঠনের তৃণমূল কর্মীদের সাথে তার দূরুত্ব তৈরী হয়। সাধারণ জনগণের মাঝেও তিনি সেভাবে যাতায়াত করেননি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফলে বাদশা ৪৮ হাজার ৯৬১ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরী ট্রাক প্রতীকে ৮৯ হাজার ২৭৪ ভোট পেয়ে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী নাজমুল হুদা ঈগল প্রতীকে ৫৩ হাজার ১০৫ ভোট পেয়েছেন।

কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা-মিরপুর) আসনে নৌকা মার্কা নিয়ে পর পর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাসদের হাসানুল হক ইনু। জাসদের কেন্দ্রী সভাপতি হয়ে ১৪ দলের প্রার্থী হিসাবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করলেও উপজেলা ও তৃণমূল আওয়ামী লীগের সাথে তার সম্পর্ক কখনই মধুর ছিল না। সাধারণ জনগণের সাথেও তিনি সেভাবে সময় দেননি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্র থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে উৎসহ দেওয়া হলে মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। দুই উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরাও তাকে সমর্থন করে।

ট্রাক প্রতীক নিয়ে কামারুল আরেফিন ৯৮ হাজার ৮৯৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৭৯ হাজার ৭৩৫ ভোট।

কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকশা) আসনে ২০১৮ সালে চমক হিসাবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়ার নাতি সেলিম আলতাফ জর্জ। সেবার তেমন প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী থাকায় তাকে নির্বাচিত হতে তেমন চ্যালেঞ্জ নিতে হয়নি।

পূর্বে সাংগঠনিক কোন অভিজ্ঞতা না থাকায় নির্বাচিত হয়ে জর্জ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তৃণমূল, উপজেলা এমনকি জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে শুধু দূরুত্ব নয় বাগযুদ্ধেও জড়িয়ে পড়েন তিনি। ফলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা, উপজেলা ও তৃনমূল আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রউফকে সমর্থন জানান।

ট্রাক প্রতীকে আব্দুর রউফ ৯৮ হাজার ৪১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। নৌকা প্রতীক নিয়ে সেলিম আলতাফ জর্জ ভোট পেয়েছেন ৮০ হাজার ১১১ টি।

কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে নৌকা প্রতীকে জয়লাভ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। পর পর তিন বার হানিফ এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন। মূলত গত ১০ বছরে কুষ্টিয়াতে তিনি ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড করেছেন। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ, বাইপাস সড়ক, হরিপুর সেতু, শেখ কামাল স্টেডিয়াম সহ বেশ কিছু মেগা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা ও ক্লিন ইমেজের কারণে তিনি পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন।

কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলীর ব্যবসায়ী পুত্র পারভেজ আনোয়ার তনু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মাঠে থাকলেও মাহবুবউল আলম হানিফের অভিজ্ঞতার কাছে তিনি পরাজিত হয়েছেন। নৌকা প্রতীকে মাহবুবউল আলম হানিফ ১ লাখ ২৮ হাজার ৫৩৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। ঈগল প্রতীকে পারভেট আনোয়ার তনু পেয়েছেন ৪৩ হাজার ৭২৬ ভোট।

মূলত জনবিছিন্নতার কারণেয় কুষ্টিয়ার তিনটি আসনে নৌকার ভরাডুবি হয়েছেন বলে সবার ধারণা।

Scroll to Top