কুষ্টিয়ার তিলের খাজা

কুষ্টিয়ার তিলের খাজা জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে

কুষ্টিয়ার তিলের খাজা ভৌগলিক নির্দেশক পণ্যের (জিআই) স্বীকৃতি পেয়েছে। জিআই পণ্য হিসাবে তিলের খাজাকে নিবন্ধন দানের জন্য কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের আবেদনের প্রেক্ষিতে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

দেশে ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন পাস হয় ২০১৩ সালে। পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর ১৭ নভেম্বর ২০১৬ সালে জামদানিকে বাংলাদেশের প্রথম ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। ১৭ আগষ্ট ২০১৭ সালে ইলিশ মাছকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।

গত দশ বছরে একে একে নিবন্ধন পেয়েছে ক্ষীরশাপাতি আম, মসলিন, বাগদা চিংড়ি, কালিজিরা চাল, বিজয়পুরের সাদা মাটি, রাজশাহীর সিল্ক, রংপুরের শতরঞ্জি, দিনাজপুরের কাটারিভোগ চাল, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম।

২০২৩ সালের জুন মাসে শীতলপাটি, বগুড়ার দই, শেরপুরের তুলসীমালা ধান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া ও আশ্বিনা আম এবং নাটোরের কাঁচাগোল্লা জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়।

সর্বশেষ ৯ জানুয়ারি ২০২৪ জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে কুষ্টিয়ার বিখ্যাত তিলের খাজার সাথে টাংগাইলের চমচম, কুমিল্লার রসমালাই এবং ব্লাক বেঙ্গল ছাগল।

কুষ্টিয়ার তিলের খাজার নাম শোনেনি বা খাননি এমন মানুষ বাংলাদেশে খুজে পাওয়া মুশকিল। তিলের খাজা কুষ্টিয়া ছাড়াও দেশের আরও কিছু স্থানে স্বল্প পরিসরে তৈরী হয়। তবে সেগুলো অধিকাংশ সময় কুষ্টিয়ার তিলের খাজা নামেই বাজারজাত করা হয়।

রেল স্টেশন, চলন্ত রেল, বাস, লঞ্চঘাট সহ দেশের বিভিন্ন যায়গায় হকাররা তিলের খাজা বিক্রি করে থাকেন। দেশের বিভিন্ন টুরিষ্ট স্পটের দোকানগুলোতেও বিভিন্ন আকার ও আকৃতির তিলের খাজা বিক্রি হয় যার অধিকাংশ কুষ্টিয়ার তিলের খাজা নামেই চলে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, কুষ্টিয়াতে তিলের খাজার প্রচলন মুঘল আমলে। “হায়রে মজার তিলের খাজা, খেয়ে দেখলিনে মন কেমন মজা” ফকির লালন শাহ দেড়শত বছর আগে লিখেছিলেন তিলের খাজা নিয়ে এমন গান।

কুষ্টিয়া শহরের পূর্বপ্রান্ত মিলপাড়া রেলগেটে ও কুমারখালী উপজেলার ছেওড়িয়া লালন আখড়ার পাশে এখনও দুটি তিলের খাজার কারখানা চালু আছে। দুটি স্থানের দূরুত্বও কাছা-কাছি। আগে আরও অনেকগুলো কারখানা ছিল। করোনা মহামারির সময় এই ব্যবসায়ের ধ্বস নামে। তিল ও চিনির মূল্য বৃদ্ধি ফলে লোকসানের কারণেও অনেকে এই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন।

কুষ্টিয়ার তিলের খাজা কিভাবে তৈরী হয়?

বিশাল লোহার কড়ায়ে ৭ কেজি চিনি, আধা লিটার দুধ আর প্রয়োজন মত মসলা ও পানি দিয়ে মাটির চুলায় জালানো হয়। জ্বালানি হিসাবে ব্যহার করা হয়ে তেতুলের খড়ি। ফুটন্ত চিনি হাল্কা ঠান্ডায় জমাট বেঁধে তৈরী হয় মন্ড বা সিরা। সিরা গরম থাকা অবস্থায় বিশেষভাবে বাঁধা গাছের ডালের সাথে ঝুলিয়ে হাতে টানা হয়। বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষিত কারিগরই এই গরম সিরায় হাত দিতে পারেন।

সিরা কিছুটা লম্বা করার পর দুই জন দুই দিকে ধরে একই সাথে টানতে ও ভাঁজ করতে থাকেন। সাইজ বেশি লম্বা হয়ে গেলে হাত লাগান আরও কয়েকজন শ্রমিক। এভাবে কোন ছাঁচ ছাড়া শ্রমিকদের হাতের নিপুন পরশে সিরা ফাঁপা নির্দিষ্ট চওড়া ও প্রস্থ হয়। এরপর লম্বা টেবিলে ফেলে নির্দিষ্ট সাইজে কাটা হয়। এরপর টুকরায় ছাল ছাড়ানো তিলের প্রলেপ দেওয়া হয়। তিলের প্রলেপ দেওয়া পর্যন্ত সিরা গরম থাকে। এরপর প্যাকেটজাত করা হয়।

সন্ধ্যা হতে সারারাত তিলের খাজা তৈরী হয়। সকাল হতে রাত পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থান হতে ক্রেতা আসেন কারখানাতে খাজা কিনতে। ফোনে অর্ডার করে কুরিয়ারের মাধ্যমেও নেন অনেক ক্রেতা।

Scroll to Top