ব্রিটিশ হঠাও আন্দোলনে সশস্ত্র বিদ্রহ করা কুষ্টিয়ার ৮ বিপ্লবী।।
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধে প্রহসন, বিশ্বাসঘাতকতা এবং ছলচাতুরির মাধ্যমে নবাব সিরজোদ্দৌলাকে পরাজিত করে ভারতে ইংরেজ শাসনের সূচনা হয়। পলাশীর প্রন্তরে পরাধনীনতার যে বীজ সেদিন রোপিত হয়েছিল কালক্রমে তা বিরাট মহীরুপে পরিণত হয়। রচিত হয় বাংলার দুইশত বছরের পরাধীনতার ইতিহাস।
ভারতে ইংরেজ উপনিবেশ উপেক্ষা করে এদেশের আধ্যাত্নবাদের প্রভাব তখনও বিলুপ্ত হয়নি। সাধক রামপ্রসাদ, বাউল সম্রাট ফকির লালন সাই (ছেঁউড়িয়া, কুমারখালী, কুষ্টিয়া), কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার (কুমারখালী, কুষ্টিয়া), অতুল প্রসাদ, দীলিপ রায়, অতুলকৃষ্ণ মিত্র, মকুন্দ দাস, কাজী নজরুল ইসলাম ছাড়াও অসংখ্য বাউল, বৈষ্ণব, চারণ কবিরা গান, কবিতা ও লেখনির মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী চেতনা ছড়াতে লাগলেন।
এইসব লেখা, কবিতা ও চারণ কবিয়ালদের গান আর বিদ্রোহের ঐক্যতানে সংঘটিত হয় অসংখ্য বিদ্যোহ। সেই মানসে প্রভাবিত হয়ে বঙ্কিম চট্রপাধ্যায় লেখেন ‘আনন্দমঠ’। পরবর্তীকালে নদীয়া জেলার (বর্তমানে কুষ্টিয়া জেলা) মোল্লাহাটি নীলকর কনসার্নের অত্যাচারের কাহিনী অবলম্বনে কুষ্টিয়ার (তৎকালীন নদীয়া) চৌবারিয়া গ্রাম নিবাসী বিখ্যাত নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র লেখেন নাটক “নীল দর্পন”।
দুইশত বছরের পরাধীনতার শিকল ছিড়তে যারা সস্বস্ত্র বিপ্লব করেছিলেন তাদের বেশ কয়েকজনের জন্ম ও বেড়ে উঠা ছিল কুষ্টিয়া জেলায় (তৎকালীন নদীয়া জেলায়)।
নীল বিদ্রহী প্যারীসুন্দরী
বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে রাজশাহী, পাবনা ও নদীয়া জেলার কুষ্টিয়া মহকুমার ৩টি অঞ্চলে কৃষক আন্দোলন সংগঠিত হয়। নীলকর সাহেবদের অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয় এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম। যার অগ্রভাগে ছিলেন কুষ্টিয়ায় জন্মানো এক মহিয়সী নারী যার নাম প্যারী সুন্দরী দেবী।
প্যারীসুন্দরীর জন্ম আনুমানিক ১৮০০ সালে। কুমারখালী ইংরেজ কুঠিরের নায়েব রামানন্দ সিংহের দুই কণ্যার মধ্যে কণিষ্ঠ্য প্যারীসুন্দরী। রামানন্দ কুষ্টিয়া জেলার (তৎকালীন নদীয়া জেলা) মিরপুর উপজেলার ইসলামপুর ও বেগমাবাদ জমিদারি ক্রয় করেন। উত্তরাধিকার সূত্রে প্যারী সদরপুরের জমিদার হন। নিঃসন্তান বিধবা প্যারীসুন্দরী প্রজাবৎসল জমিদার ছিলেন। আজীবন তিনি মাটি, মানুষ ও দেশমাতৃকার স্বার্থে লড়াই করেছেন।
নীলকর টমাস আইভান কেণী আমলা সদরপুরে প্যারীসুন্দরীর চাষীদের নীলচাষে বাধ্য করেন ও অত্যাচার নিপিড়ন করতে থাকেন। প্রজাবৎসল প্যারীসুন্দরী কেনী সাহেবের সমুচিত জবাব দিতে চাষীদের নিয়ে বিশাল লাঠিয়াল বাহিনী গড়ে তোলেন। কেণীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে প্যারীসুন্দরী লাঠিয়াল বাহিনী ও সাধারাণ প্রজাদের নিয়ে কুষ্টিয়া সদরের সালঘরমধুয়ায় অবস্থিত কেণীর কুঠি আক্রমণ করেন। কেণী সাহেব পালিয়ে বাঁচলেও দারোগা মহম্মদ বক্স প্রান হারান। কেণী প্যারীসুন্দরীর বিরুদ্ধে কুঠি লুটের মামলা করেন।
নীলকর কেণী ও জমিদার প্যারীসুন্দরীর লড়াই ছিল নাটকীয়তায় পূর্ণ। কেণী ও প্যারীসুন্দরীর লড়ায়ের কাহিনী মীর মশাররফ হোসেনের ‘উদাসীন পথিকের মনের কথা’ নাটকে উঠে এসেছে। এই সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ইংরেজ সরকার ধানের জমিতে কৃষকের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক নীলচাষে বাধ্য না করতে নির্দেশনা প্রদান করে।
১৮৭০ সালে প্রজাদরদি, স্বদেশপ্রেমী, অসীম সাহসী এই মহিয়সী নারী মৃত্যুবরণ করেন।
ওয়াহাবি আন্দোলন নেতা কাজী মিয়াজান
ওয়াহাবি আন্দোলনের বিখ্যাত নেতা কাজী মিয়াজান ১৮০২ সালে কুষ্টিয়া জেলার (তৎকালীন নদীয়া জেলার) কুমারখালী উপজেলার দূর্গাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জমিদার, নীলকর, জোতদার, মহাজনদের অত্যাচার ও শোষণে বিপর্যস্ত মুসলমানদের চরম দুর্গতি দেখে মিয়াজান ব্যাথিত হন ও প্রতিকারের পথ খুজতে থাকেন। মুসলমাদের মধ্যে শিক্ষার বিস্তার না হওয়ায় অশিক্ষিত মুসলমানরা সে সময় কুমারখালী অঞ্চলে স্বধর্ম ভুলে হিন্দুদের লক্ষীপূজা, গাঁজন উৎসব, মনসা পূজা, শীতলাদেবীর পূজাসহ বিভিন্ন বিধমী কাজে লিপ্ত ছিল। মুসলমানরা তাদের ছেলে-মেয়ের নামও হিন্দুদের অনুকরণে রাখত।
দরিদ্র মুসলমানদের চরম অধপতন দেখে কাজী মিয়াজান তাদেরকে জাগানোর চেষ্টা করেন। কুষ্টিয়া, কুমারখালী ও খোকশা অঞ্চলে তিনি গোপনে ইসলাম প্রচারের মাধ্যমে মুসলমানদের মধ্যে ইসলামী জ্ঞান বৃদ্ধি, চেতনার জাগরণ ও মূল্যবোধ সৃষ্টিতে কাজ করেন।
১৮৬১ সালে ওয়াহাবি-মুজাহিদ বাহিনীর সাথে ইংরেজদের রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষ হয়। কাজী মিয়াজান কুমারখালী হতে গ্রেফতার হন। পাঞ্জাবের আম্বালা মামলায় এগারজন আসামির মধ্যে কাজী মিয়াজান অন্যতম ছিলেন। প্রহসনের বিচারে ১৮৬৪ সালে একসাথে মাওলানা জাফর খান ধানেশ্বরী, ইয়াহিয়া আলী ও হাজী মহম্মদ শফিকের ফাঁসির আদেশ হয়। কাজী মিয়াজান সহ মৌলবি আব্দুর রহিম, এলাহী বক্স সওদাগর, ইসমাইল ভাতৃদ্বয়, আব্দুল গাফফার ও মুন্সী আব্দুল গাফফারের যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়।
কাজী মিয়াজান মুসলমানদের পুনর্জাগনের যে চেষ্টা করেছিলেন তা একেবারে ব্যার্থ হয়নি। পরবর্তিকালে মিয়াজানের পথ অনুসরণ করেই পরিচালিত হয়েছিল ‘ইসলামী সংস্কার আন্দোলন ‘।
যাবজ্জীবন কারাদন্ড ভোগকালে আম্বালা জেলে ১৮৬৫ সালে কাজী মিয়াজান মৃত্যুবরণ করেন।
কুষ্টিয়ার ৮ বিপ্লবী
বিপ্লবী বাঘা যতিন
বৃটিশ বিরোধী আন্দলনের অন্যতম কুশিলব যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ওরফে বাঘা যতীন ১৮৭৯ সালের ৭ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া জেলার (তৎকালীন নদীয়া জেলা) কুমারখালী থানার কয়া গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম ছিল উমেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ও মাতা শরৎশশী দেবী। বাঘা যতীনের পৈতৃক নিবাস ছিল পাশ্বপর্তী ঝিনাইদহ জেলার বিশাখালী গ্রামে।
মাত্র পাঁচ বছর বয়সে পিতৃহীন হলে বড় বোন বিনোদবালা সহ তার মা কয়া গ্রামে পিতার বাড়ীতে চলে আসেন। যতীনের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর মামা বসন্তকুমার চট্রোপাধ্যায়ের বাসা কৃষ্ণনগরে থেকে এবি স্কুলে ভর্তি হন। ১৮৯৮ সালে এবি স্কুল হতে প্রবেশিকা পাশ করে কলকাতা সেন্ট্রাল কলেজে এফএ তে ভর্তি হন।
বেড়াতে গিয়ে বাঘের আক্রমণের শিকার হলে লড়াই করে বাঘটি হত্যা করেন। সেই থেকে তিনি বাঘা যতীন নামে পরিচিতি লাভ করেন।
সেন্ট্রাল কলেজের পাশেই স্বামী বিবেকানন্দ বাস করতেন। স্বামী বিবেকানন্দের সংস্পর্শে এসে যতীন স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বদ্ধ হন। ১৯০০ সালের দিকে ‘অনুশীলন’ সমিতির প্রতিষ্ঠাতাদের সাথে যুক্ত হয়ে জেলায় জেলায় গুপ্ত সমিতির শাখা বিস্তারে কাজ শুরু করেন।
১৯০৩ সালে শ্রী অরবিন্দ ঘেষের সান্নিধ্যে এসে যতীন সশস্ত্র আন্দোলনের বৈপ্লবিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হন।১৯০৬ সালে দেওঘরে বারীণ ঘোষের সাথে বোমা তৈরীর কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০৮ সালে শিলাগুড়ি স্টেশনে ক্যাপ্টেন মার্ফি সহ চার জন সামরিক অফিসারের সাথে যতীনের মারপিট হয়। চারজনের চোয়াল ভেঙ্গে দেবার অপরাধে যতীনের নামে মামলা হয়। সাক্ষ প্রমাণের অভাবে এই মামলা থেকে যতীনকে অব্যহতি দেওয়া হয়।
সাম্রাজ্যের বিরিুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার অভিযোগে ১৯১০ সালে যতীনকে গ্রেফতার করা হয়। শুরু হয় হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলা। এ মামলায়ও যতীন মুক্তি পান।
১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির সহায়তায় সর্বভারতীয় বৈপ্লবিক দলসমূহ ইংরেজদের বিরুদে যে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করে তার মূলে ছিলেন বাঘা যতীন। বপ্লবের জন্য অর্থ সংগ্রহরে জন্য যতীন অভিনব ডাকাতির পদ্ধতি অবলম্বন করেন। ১২ ফেব্রুয়ারী ১৯১৫ ও ২২ ফেব্রুয়ারী ১৯১৫ দু’টো চোখ ধাঁধানো ডাকাতির সংবাদ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।
সরকার বিপ্লবীদের ধরতে অভিযান শুরু করে। যতীন ঘোষণা করলেন ‘আর পালানো নয়, যুদ্ধ করে আমরা মরব’। ৮ সেপ্টেম্বর সারাদিন গভীর জঙ্গলে কাটিয়ে সারারাত পায়ে হেটে পরেরদিন ভোরবেলা পৌঁছলেন বালেশ্বর নদীর বুড়িবালামের উপকন্ঠে। সাঁতার কেটে নদীর ওপারে গিয়ে যুদ্ধের পক্ষে মোটামুটি উপযুক্ত শকনো এক ডোবার মধ্যে আশ্রয় নিলেন। পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সাথে যুদ্ধে ঘটনাস্থলে শহীদ হলেন চিত্তপ্রিয় রায় চৌধুরী।
যতীনের শরীরে গুলি লাগে। অসুস্থ যতীন হেসে বলেন, ‘এত রক্ত ছিল শরীরে? ভাগ্যক্রমে প্রতিটি বিন্দু অর্পণ করে গেলাম দেশমাতার চরণে’। পরদিন ১০ সেপ্টেম্বর ১৯১৫ সালে বালেশ্বর সরকারি হাসপাতালে যতীন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। যতীনের শেষ কথা ছিল, ‘আমরা মরব, দেশ জাগবে’।
বিপ্লবী জ্যোতিষচন্দ্র পাল
জ্যোতিষচন্দ্র পাল ১৮৭২ সালে কুষ্টিয়া (তৎকালীন নদীয়া) জেলার খোকসা থানার কমলাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল মাধবচন্দ্র পাল।
জ্যোতিষচন্দ্র পাল বিপ্লবী বাঘা যতীনের সাথে ১৯১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উড়িষ্যার বালেশ্বরের সমুদ্র উপকূলে জার্মান জাহাজ ‘ম্যাভেরিক’ থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করেন। ৭ সেপ্টেম্বর গভীর রাত্রে বাঘা যতীন সামরিক আস্তানা মহলডিহাতে ফিরে এলে জ্যোতিষচন্দ্র পাল, চিত্তপ্রিয় রায় চৌধুরী, মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত এবং নীরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত সাথে আসেন।
৯ সেপ্টেম্বর বালেশ্বরের যুদ্ধে চিত্তপ্রিয় রায় শহীদ হন। বাঘা যতীনের শরীরে গুলি লাগলে তিনি ধরা পড়েন ও পরিরদিন বালেশ্বর সরকারি হাসপাতলে মৃত্যুবরণ করেন। জ্যোতিষচন্দ্রপালও সেদিন ধরা পড়েন। বিচারে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হন। পুলিশের নির্মম অত্যাচারে আন্দামান সেলুলার জেলে কুঠুরিবিদ্ধ অবস্থায় তিনি উন্মাদ হয়ে যান। ১৯২৪ সালের ৪ ডিসেম্বর বহরমপুর উন্মাদ আশ্রমে এই বিপ্লবী মৃত্যুবরণ করেন।
বিপ্লবী নলিনীকান্ত কর
বিট্রিশবিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবী নলিনীকান্ত কর কুষ্টিয়া (তৎকালীন নদীয়া) জেলার কুমারখালী থানার এনায়েতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শশীভূষন করও যুগান্তর দলের সাথে যুক্ত ছিলেন। বাঘা যতীনের সংস্পর্শে বৈপ্লবিক কাজে যুক্ত হন।
১৯০৯ সাল হতে বাঘা যতীনের একনিষ্ঠ সহকারী হিসাবে কাজ করতে শুরু করেন। হাওড়া স্বদেশি ডাকাতি কেসে যুক্ত থাকলেও পুলিশ তাকে ধরতে পারেনি। ছদ্মবেশে বাঘা যতীনের সাথে উড়িষ্যার ময়ুরভঞ্জ জেলায় আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় চলে যান। সেখানে স্থানীয় মানুষদের ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করা ও বিদ্যোহে অংশগ্রহণে উৎসহ ও অস্ত্র চালনা প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন।
বালেশ্বর বুড়ি বালামের তীরে ঐতিহাসিক যুদ্ধে তিনি ঘটনাচক্রে অনুপস্থিত ছিলেন। যুদ্ধে বাঘা যতীনের মৃত্যু ও অন্যান্যদের গ্রেপ্তারের পর তিনি এলাকা ত্যাগ করেন। ছদ্মবেশে বিপ্লবী যদুগোপাল মুখাজী, মন্মথ বিশ্বাস, সতীশ চক্রবর্তীর সাথে বাংলা, বিহার, আসামের বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক প্রচারে অংশ নেন।
চন্দন নগরের প্রবীণ বিপ্লবী ও প্রবর্তক সংঘের নেতা মতিলাল রায়ের চেষ্টায় ব্রিটিশ সরকারের সাথে বোঝাপড়ায় নলিনীকান্ত কর সহ কয়েকজন বিপ্লবী আত্মসমর্পণ করেন। বিহারের ডেহরি অন শোনে তিনি আমৃত্যু বসবাস করেন। সেখানেই ১৯৮০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কুষ্টিয়ার ৮ বিপ্লবী
বিপ্লবী অতুলকৃষ্ণ ঘোস
অতুলকৃষ্ণ ঘোস কুষ্টিয়া (তৎকালীন নদীয়া) জেলার কুমারখালী থানার এতমামপুর গ্রামে ১৮৯০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা তরেশচন্দ্র ও মাতা বিনোদিনী দেবী। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যায়নকালে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হন।
১৯০৬ সালে গ্রামের বন্ধু নলিনীকান্ত করের সাথে বাঘা যতীনের দলে যুক্ত হন। অতুলকৃষ্ণ ঘোস যুগান্তর সমিতির সাথে অনেকগুলো স্বদেশি ডাকাতিতে যুক্ত ছিলেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় বন্দী হন ও নির্যাতন ভোগ করেন। ১৯১৬ সালে মুক্তি পেয়ে রাজনীতি থেকে দূরে সরে যান। ‘অর্নেষ্ট ডে’ হত্যার অপরাথে অভিযুক্ত হয়ে ১৯২৮ থেকে ১৯২৬ সাল পর্যন্ত বন্দী থাকেন। মুক্তি পেয়ে তিনি আধ্যাত্মিক সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন।
১৯৬৬ সালের ৪ এপ্রিল অতুলকৃষ্ণ ঘোস কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
বিপ্লবী সরোজ আচার্য
বিপ্লবী, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক সরোজ আচার্য ১৯০৭ সালের ১১ মে কুষ্টিয়া শহরের আমলাপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম ছিল দক্ষিণারঞ্জন। সরোজ আচার্য ১৯২১ সালে কুষ্টিয়া হাইস্কুল হতে ম্যাট্রিক ও কৃষ্ণনগর করেজ হতে বিএ পাশ করেন। ১৯৩০ সালে চট্রগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন মামলায় গ্রেফতার হন। মুক্তি পেয়ে ‘হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডর্ড’ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসাবে কাজ শুরু করেন। তিনি েএকজন চিন্তাশীল প্রাবন্ধিক ও মাক্সীয় দর্শনের তাত্ত্বিক ছিলেন।
১৯৬৮ সালের ১৯ নভেম্বর সরোজ আচার্য কলকাতায় পরলোক গমণ করেন।
কুষ্টিয়ার ৮ বিপ্লবী
বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু
বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলনের এক মৃত্যুঞ্জয়ী নাম। ১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল তদানীন্তন অত্যাচারী চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যার উদ্যেশ্যে বোমা ছুড়ে মারেন। পরের দিন পুলিশের হাতে ধরা পড়েন এবং মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হন। ১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট ভোরে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়।
বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর জন্ম ও বেড়ে উঠা কুষ্টিয়া জেলায় নয়। চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যার উদ্যেশ্যে বোমা ছুড়ে পালাতক অবস্থায় কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থানার দযুবয়রা গ্রাম হতে তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন বলে কথিত আছে। বিশ্বাস ঘাতক মামা পূর্ণ লাহেড়ী এই ঘটনার পর এই এলাকা হতে আত্মগোপনে পালিয়ে গিয়েছিলেন। পূর্ণ লাহিড়ীর বাড়ীটি আজও পরিত্যাক্ত অবস্থায় ইতিহাসের স্বাক্ষী হিসাবে দাড়িয়ে রয়েছে। এই ঘটনা প্রবাহ ক্ষুদিরাম বসুকে কুষ্টিয়ার ইতিহাসের পাতায় গুরুত্ব অনুধাবনপূর্বক স্থান করে দিয়েছে।