কুষ্টিয়া ভ্রমণ ২য় পর্ব
কুষ্টিয়া ভ্রমণ এ কুমারখালী থাকবেনা তা কি হয়! প্রথম পর্বে আমরা বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত শিলাইদহ কুঠিবাড়ী, বাউল সাধক লালন শাহের মাজার ও সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন বাস্তুভিটা ভ্রমণের কথা লিখেছি। তাই এই পর্বে এগুলো আর উল্লেখ করা হল না যদিও এগুলোও কুমারখালী উপজেলার মধ্যেই পড়ে।
কুষ্টিয়া শহর হতে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া সড়কে ১১ কিলোমিটার পূর্বদিকে গেলে কুমারখালী বাসস্ট্রান্ড। কুমারখালী শহর কুষ্টিয়ার থেকেও পুরাতান ও ঐতিহ্যবাহী। কালের পরিক্রমায় কুমারখালী কখনও থানা হয়েছে, কখনও জেলা (মহকুমা) হয়েছে আবার ফের থানা হয়েছে। কখনও রাজশাহী, কখনও ফরিদপুর, কখনও পানবা, কখনও নদীয়া, কখনও যশোর জেলার অর্ন্তভূক্ত হয়েছে। কখনও নাটোরের রাণী ভবানীর স্টেটের অন্তভূক্ত থেকেছে আবার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের জমিদারির অংশ হয়েছে।
কুমারখালী গেলে আপনাকে কুন্ডুপাড়া যেতেই হবে। রাস্তুয় রেললাইনের পাশে ঐতিহ্যবাহী রমেশ মিষ্টান্ন ভান্ডার পড়বে। রমেশের সন্দেশ ও রসগোল্লা খেতে ভুলবেন না। কুন্ডুপাড়া ঢুকলেই কলকাতায় এসে পড়েছেন মনে হবে। সারি সারি পুরাতন আমলের ঘর বাড়ী চোখে পড়বে।
সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার অগ্রদূত কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের (Kangal Horinath Mojumdar) বাড়ী এই পাড়াতেই। এমএন প্রেস, ছাপাখানার অক্ষর দেখতে পাবেন তার পুরাতন বাড়ীতেই।
শতাব্দী প্রাচীন কুমারখালী পৌরসভার পাশে কাঙ্গালের স্মৃতিকে ধরে রাখতে সরকারি ভাবে কাঙ্গাল হরিনাথ মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ঐতিহাসিক ছাপার যন্ত্র, এম এন প্রেসের মডেল, কিছু যন্ত্রাংশ, টাইপ অক্ষর, ছবি ও বেশ কিছু পান্ডুলিপি কালের সাক্ষী হয়ে জাদুঘরে স্থান পেয়েছে।
সাহিত্যিক রায় বাহাদুর জলধর সেন, ঐতিহাসিক অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় ও কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের স্মৃতি বিজড়িত ১৮৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত কুমারখালী এম এন হাইস্কুল ও ১৮৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত কুমারখালী সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখে নিন।
কুমারখালী শহরের দক্ষিণ দিকে গড়াই নদীর তীরে গড়ে উঠেছে গড়াই ইকো পার্ক। এখানে বসে শেষ বিকালে গড়ই এর বুকে সূর্যাস্ত দেখা যায়। দক্ষিণ দিকে নদী হওয়ায় গরমের দিনে সন্ধ্যার পরও বেশ লোক সমাগম হয় পার্কটিতে।
তাত শিল্প নগরী কুমারখালী এসে লুঙ্গি, গামছা ও বেডশিট না নিয়ে ফিরবেন না যেন! বিখ্যাত বুলবুল টেক্সটাইল মিলস, রানা টেক্সটাইল মিলস, ইষ্ট্রার্ণ ফেব্রিকস্ এই শহরেই পাশাপাশি দেখতে পাবেন।
কাপড়ের বাজারে কালুর হোটেলের বোয়াল মাছের ঝোল টা টেষ্ট করে নিতে পারেন। কুমারখালীর তিলে মটকা আর মটকা চা না খেয়ে ফিরলে পরে আফসোস হবেই।